বোবা পরী ইকো এবং প্রতিধ্বনি

বুঝলে তালেব!
একমুঠো ভাত জুটুক কিংবা নাই জুটুক
নিয়ম করে সকাল বিকাল দু’বেলা ঠিকই প্যাদানী জুটতো মেয়েটির কপালে।
ভাতের সেই সানকিটায় সালুনের দেখা মিলুক কিংবা নাই মিলুক
ঠিকই মিলতো মিছরির ছুরির টিপ্পনী আর চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করা অশ্রাব্য গালাগাল।
ঘর মন জানালায় পিরিতের ছোঁয়া লাগুক কিংবা নাই লাগুক
পতিদেবের রক্তচক্ষু আর ঔদ্ধত্য হাত ছুঁয়ে দিতো তাকে ঠিকই।

সাধ করে কি আর কেউ গলায় দড়ি দেয় তালেব!

তুমিতো শুধু দেখেছো মেয়েটির শরীরে বয়ে বেড়ানো কতক ক্ষতচিহ্ন!
দেখতেও পাওনি কোমল মনের এঁফোড় ওফোঁড় জুড়ে দগদগে ঘা।

খুঁজে দেখো তালেব
নিদেন করে হলেও আরো একশ একটি ঘাতসহ ললনার সন্ধান মিলবে এই তল্লাটে।
ঘাতসহ হয়েই যে গড়ে উঠছে সেইসব ললনা, স্বজনের নিবিড় পরিচর্যায়!

জানো তালেব!
নিজগৃহ থেকেই শুরু হয় সেই চর্চাটার।
পায়ে পায়ে বিধিনিষেধের শেকল পড়েই পথচলে সেইসব ললনা।
উচ্চস্বরে বলতে মানা,হেড়ে গলায় গাইতে মানা,শখের বশে চাইতে মানা,
লোক দেখিয়ে হাসতে মানা, কাঁদতে মানা, ঘর হতেও পা ফেলতে মানা।
এতো এতো মানার স্তুপের নীচে পিষ্ট হয়ে অঙ্কুরেই হয় বিনষ্ট তাদের স্বকীয়তার ডানা।

বুঝলে তালেব!
ঘরগুলো যেনো হয়েছে সব বোবা পরী ইকো তৈরীর কারখানা!
ইকোদের শুধু বুকই ফাটে, মুখতো ফোটেনা!
ইকোদের আত্মাহুতিতে শুনতে পাই একটিই প্রতিধ্বনি।

তোমাদের তথাকথিত সভ্য সমাজের অসভ্যতার প্রতিধ্বনি।

Share:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *